লাভ ম্যারেজ নয়, ম্যারেজ উইথ লাভ

সূরা নিসার ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন,

“……….. মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই।” [৪ঃ৩]

এখানে আল্লাহ্‌ পরিষ্কার বলে দিয়েছেন “যাদের ভালো লাগে” সেইসব নারীদেরকে বিয়ে করতে। আর আমাদের সমাজে “যদি কোন মেয়েকে ভালো লাগে” তাকে বিয়ে করতে কি পরিমাণ কষ্ট পোহাতে হয়, কাঠখড় পোড়াতে হয় তা বাঙ্গালী নাটক নভেলের চেয়েও বাস্তবে আরো ভালো করে বোঝা যায়।

ছেলে পড়াশোনা শেষ করে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একটা চাকরি যোগাড় করার পর বাবা-মার খেয়ালে আসে যে ছেলের বিয়ে দেয়া দরকার। শুরু হয় পাত্রী খোঁজার মহাযজ্ঞ। তারপর মা বাবার পছন্দ, বোনের পছন্দ, ভাবির পছন্দ, মামার পছন্দ, অমুকের ভাসুরের পছন্দ সবার পছন্দ শেষ করে পাত্রের পছন্দ হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হয়। লাজুক ছেলে তখন সলজ্জে উত্তর দেয়, ‘আপনারা মুরুব্বী মানুষ, আপনারা যা ভালো বুঝেন তাই করেন। এটি হচ্ছে টিপিকাল বাঙ্গালী ভালো ছেলে।

একবার এক মহিলা সম্ভবত তার নাম লায়লা বিনতে কায়স ইবনুল খাতিম রাসূলুল্লাহর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেদমতে হাজির হয়ে তার সাথে নিজেকে বিয়ের জন্য সরাসরি প্রস্তাব পেশ করেন। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নীরব থাকেন। মহিলার কথা শুনে পাশে থাকা আনাস (রাঃ) এর কন্যা বলে উঠলেন,

‘মা কানা আ’কাল্লা হা’য়াহা’
‘মেয়েটা কত নির্লজ্জই না ছিল’

আনাস (রাঃ) তাকে বললেন, ‘সে তোমার তুলনায় অনেক ভালো ছিল। সে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল এবং নিজেকে রাসূলের (সা.) নিকট বিয়ের জন্য পেশ করেছিলো।’

পরবর্তীতে এক সাহাবী তাকে বিয়ের জন্য আগ্রহী হলে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিয়ে দিয়ে দেন।

খানসা বিনতে খিদাম রাযিআল্লাহু তায়ালা য়ানহার স্বামী উহুদ যুদ্ধে শাহাদাৎ বরণ করলে তার বাবা তাকে এক ব্যাক্তির নিকট বিয়ে দিয়ে দেন। তখন হযরত খানসা (রা.) রাসুল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললেন,

‘আমার পিতা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন; অথচ আমি আমার সন্তানের চাচাকেই অধিক পছন্দ করি’।

তার কথাগুলো লক্ষ্য করুন। তার বিয়ে হয়ে যাবার পর তিনি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে জানান, তার স্বামী হিসেবে তার সন্তানের চাচাকেই তিনি বেশী পছন্দ করবেন। এরপর যা ঘটলো তা হল, আল্লাহর রাসূল (সা.) তার বিয়ে ভেঙ্গে দিলেন।

এ ধরণের আরেকটি ঘটনা পাওয়া যায় মুগীরা ইবন শুবা রাযিয়াল্লাহু য়ানহুর ক্ষেত্রে। উসমান ইবন মাযউন রাযিয়াল্লাহু য়ানহুর মৃত্যুর পর তার কন্যাকে তার চাচা কুদামাহ বিয়ে দিয়ে দেন ইবন উমারের রাযিয়াল্লাহু য়ানহুর সাথে। কিন্তু ইবন উমার (রা.) প্রথম সারির একজন সাহাবী হওয়া সত্ত্বেও মেয়েটি এ বিয়েতে রাজি ছিলনা কারণ সে মুগীরা ইবন শুবাকে (রা.) পছন্দ করতো এবং সে চেয়েছিল যেন মুগীরা ইবন শুবা রাদিয়াল্লাহু আনহু)তাকে বিয়ে করেন। অবশেষে তার চাচা এ বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে মুগীরার (রা.) সাথে তার বিয়ে দেন।

।।

ইসলাম মানব মনের কি চমৎকার মূল্যায়নই না করেছে। সুবহানআল্লাহ। কোন নাটক নেভেলে পাওয়া যাবে এরকম একটি ঘটনা?

রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরামর্শ হলো,

“তুমি আগে গিয়ে তাকে দেখে নাও কেননা এটি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতিতে সহায়ক হবে।” [ইবনে মাজা]

আপনি কোন মুসলিমাহর প্রতি আকৃষ্ট হবেন এটাই স্বাভাবিক, কেননা এটা আপনার ফিতরাত। সূরা আর-রূমে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা বলছেন,

“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে হচ্ছে যে তিনি তোমাদের মধ্যে থেকে তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন যুগলদের, যেন তোমরা তাদের মধ্যে স্বস্তি পেতে পার, আর তিনি তোমাদের মধ্যে প্রেম ও করুণা সৃষ্টি করেছেন। (৩০:২১)

কোন মুসলিমাহ বোনের দ্বীনদারী, চরিত্র আপনার ভালো লাগতেই পারে। তবে এ ভালোবাসার একটা সীমারেখা রয়েছে। যদি তাকে পেতে চান, তাহলে চিরদিনের জন্য তাকে আপন করে নিন; দুই মাস বা দুই বছরের জন্য নয়। কাউকে পছন্দ করলে ইসলামের মূলনীতিটা হল,

‘ইঝা আতাকুম মান তারদাওনা দীনাহু ওয়া আক’লাহু ফাংকিহু’হু ’ (তিরমিযী)

‘তোমরা যখন বিয়ের জন্য এমন ছেলে বা মেয়ে পেয়ে যাবে যার দ্বীনদারী চরিত্র ও জ্ঞান-বুদ্ধিকে তোমরা পছন্দ করবে, তো তখনই তার সাথে বিয়ের সম্বন্ধ স্থাপন করো।

আবার অভিভাবকদেরকে বলা হচ্ছে,

“যদি এমন কেউ তোমার কাছে বিয়ের পয়গাম নিয়ে আসে – যার চরিত্র এবং তাকওয়া সন্তোষজনক, তাহলে তার কাছে (তোমার মেয়েকে) বিয়ে দাও। যদি এমনটি না কর, তাহলে পৃথিবীতে মারাত্মকরকম ফেতনা ও বিপর্যয় দেখা দিবে।” [তিরমিযি]

এটাই অবৈধ সম্পর্কের সাথে এর মাঝে পর্দা টেনে দিয়েছে। আপনি কাউকে পছন্দ করতে পারবেন কিন্তু তার সাথে কোনরূপ সম্পর্কে জড়াতে পারবেন না। বিয়ের প্রস্তাব সংক্রান্ত হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। কোন নারীকে পছন্দ হলে তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে হবে তার অভিভাবকদের মাধ্যমে। এরপর তার মতামতের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে।

খুব ভালো নয় বিষয়টা? কত সম্মানজনক। মানব হৃদয়ের কত নিকটবর্তী।

সংগৃহীত ও সংক্ষেপিত। jasthasan.net

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান