স্বপ্ন

স্বপ্ন আল্লাহর তরফ থেকে আসতে পারে। আপনি আপনার স্বপ্নে রাসুলুল্লাহ (সা) কে দেখতে পারেন। আপনার হৃদয় বলছে আপনি যাকে দেখেছেন তিনিই আখেরী পয়গম্বর রাসুলুল্লাহ (সা)। তাহলে আপনি মিথ্যে কিছু দেখেননি। আপনি স্বপ্নে আপনার মৃত বাবা-মাকে দেখতে পারেন, ফেরেশতাগণকে দেখতে পারেন, জান্নাত-জাহান্নাম দেখতে পারেন। তাহলে বুঝতে হবে এই স্বপ্ন আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে। তখন আপনি ঘুম থেকে উঠে দুই রাকাত শুকরিয়া নামায আদায় করবেন।

কিন্তু স্বপ্ন শয়তানের তরফ থেকেও আসে। সেই স্বপ্ন কারো কাছে প্রকাশ করা উচিত নয়। কারণ যদি আপনি সেই স্বপ্ন প্রকাশ করেন, তাহলে ধীরে ধীরে তা আপনার উপর ভর করবে। আল্লাহপাক আপনাকে অনেক সুন্দর চরিত্রের স্ত্রী দিয়েছেন। সেই স্ত্রী সব সময় আপনার খেয়াল রাখেন। আপনাকে নিজের থেকেও বেশী ভালবাসেন। কিন্তু একদিন আপনি ঘুমালেন আর স্বপ্নে দেখলেন, আপনার স্ত্রী অন্য একজন সুদর্শন যুবকের হাত ধরে হাঁটছে। ঘুম ভাঙার পর আপনি আপনার স্ত্রীর উপর ভীষণ রাগান্বিত হলেন। তাকে অনেক কথা শোনালেন। পরদিন আপনি ঘুমালেন আর স্বপ্নে দেখলেন, ওহ মাই গড! আপনার স্ত্রী সেই যুবকের বাহুতে! আপনি আতঙ্কিত অবস্থায় ঘুম থেকে উঠলেন। রাগে আপনার মুখ লাল হয়ে গেছে। বুঝতে হবে, শয়তানের তরফ থেকে আসা স্বপ্ন আপনার উপর ভর করেছে।

একজন সাহাবী তড়িঘড়ি করে রাসুলুল্লাহ (সা) এর কাছে আসলেন এবং বললেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি স্বপ্নে দেখেছি কয়েকজন ছেলে বল খেলছে। আর সেই বলটা হলো আমার মাথা।” রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, “এই স্বপ্ন শয়তান তোমাকে দেখিয়েছে। কারণ সে তোমার জীবনকে দুর্বিষহ করতে চায়।”

আবার স্বপ্ন হৃদয় থেকেও আসে। একজন পিতৃহীন গরীব শিশু তার বাসার জানালা দিয়ে দেখল, আইসক্রিমওয়ালা এসেছে আর এলাকার সব শিশুরা আইসক্রিম কিনতে ছুটে যাচ্ছে। সে তার মা’র কাছে আইসক্রিম কেনার টাকা চাইল। মা তাকে টাকা নেই বলে ধমক দিল। সে জানালা দিয়ে দেখল, সব শিশুরা আইসক্রিম খাচ্ছে। সে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেল। স্বপ্নে দেখল, মা তাকে আইসক্রিম কেনার টাকা দিয়েছে। সে টাকা নিয়ে দৌড়ে গেল আইসক্রিমওয়ালার কাছে। আইসক্রিম খেতে খেতে তার নাক-মুখ-জামায় আইসক্রিম লেগে গেছে। তারপর যখন সে ঘুম থেকে উঠল, তার হৃদয়ে একধরণের তৃপ্তি কাজ করছে। বুঝতে হবে, এই স্বপ্ন এসেছে হৃদয় থেকে।

একজন এতিম ছেলে তার দাদীর সাথে থাকে। দাদীর এক হাতে লাঠি, অন্য হাতে তার হাত। দাদীর হাতের সুস্বাদু খাবার তার খুব প্রিয়। দাদীর সাথে গল্প করে তার দারুন সময় কাটে। এভাবেই সে দাদীর সঙ্গ পেয়ে বড় হয়েছে। কিন্তু এখন দাদী একটি হুইল চেয়ারে সারাক্ষণ অর্ধমৃতের মত পড়ে থাকে। কোন কথা বলে না। চলাচল করে না। সেই নাতী একদিন স্বপ্নে দেখল, তার দাদী আগের মত হয়ে গেছে। গল্প করছে, রান্না করছে, তাকে এটা-ওটা উপদেশ দিচ্ছে। এটি দেখে তার মন আনন্দে ভরে গেল। বুঝতে হবে, এই স্বপ্ন হৃদয় থেকে এসেছে।

কিন্তু মাঝে মাঝে স্বপ্ন আসে সাবধানবাণী হিসেবে। তিনি একজন বড় মাপের হুজুর। দেশ বিদেশ থেকে লোকেরা আসে তার সাথে একবার হাত মেলানোর জন্য। তার কোরানপাঠ শুনে শ্রোতারা মুগ্ধ হন। তার বক্তব্য শুনতে লাখো লাখো মানুষের ঢল নামে। তিনি নিশ্চিত যে, জান্নাতে আর কেউ যাক না যাক, তিনি যাবেনই। একদিন তিনি ঘুমালেন আর স্বপ্নে নিজেকে টয়লেটে আবিষ্কার করলেন। বুঝতে হবে, এই স্বপ্নটা সাবধানবাণী, ওয়াক আপ কল।

কিন্তু স্বপ্ন কখনও কখনও আসে ওহী হয়ে, ভবিষ্যতবাণী হয়ে। আপনি স্বপ্নে দেখলেন নিউক্লিয়ার বোমায় শহর জ্বলছে আর আকাশ মাশরুম ক্লাউডে ঢেকে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। কোন সূর্যালোক সেই অন্ধকারকে ছিদ্র করে বের হয়ে আসতে পারছে না। চারিদিকে লাশ আর ধ্বংসস্তূপ। বুঝতে হবে, এই স্বপ্ন নিউক্লিয়ার বিশ্বযুদ্ধের ভবিষ্যতবাণী।
.
—- শেখ ইমরান হোসেন।
শোকরিয়া @ Md Arefin Showrav

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান