গতকাল সকালে আমার বাবা ইন্তেকাল করলেন

আবু মুনতাহা

5 October 2014 ·

গতকাল সকালে আমার বাবা ইন্তেকাল করলেন

গতকাল সকাল পৌনে নয়টার দিকে আমার বাবা রমজান আলী, পিতা – মরহুম আব্দুল জলিল মোল্লা তার নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিয়ুন। তার বয়স প্রায় সত্তুরের কাছাকাছি ছিল। মৃত্যুর সময় আমার মা তার পাশে ছিলেন। আমার বাবা আল্লাহর রহমতে তেমন কোন রোগাক্রান্ত ছিলেন না। এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি স্বাবলম্বী ছিলেন। ছোট একটা ফার্মেসির ব্যবসা ছিল তার। নিজে আয় করতেন। চলাফেরায় কারো কোন সাহায্য নিতেন না। নিজের কাপড় চোপড় নিজেই ধৌত করে ব্যবহার করতে পছন্দ করতেন। শেষ সময় পর্যন্ত তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্ত ছিলেন। আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ছিল তার অগাধ বিশ্বাস। আলহামদুলিল্লাহ।

মৃত্যুর দিন সকালে বাবা আমার মাকে বললেন খিচুড়ি রান্না করতে। আমার বোন আচাড় দিয়েছে। ওটা দিয়ে খাবেন। তো সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনি অস্বস্তি বোধ করেন। আমার মা ছুটে আসেন। আমার মা বললেন পানি দিব কিনা। বললেন, না। আমার বোনকে এ্যাম্বুলেন্স আনতে বলে দূরে সরিয়ে দিলেন। সম্ভবতঃ অন্তিম সময়ে তার মেয়ে যেন কষ্ট না পায়। মাকে তিনি বলেন জোড়ে জোড়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বলতে। নিজেও কয়েকবার পড়লেন। আমার মাকে বললেন ধৈর্য্য ধারণ করতে। বলতে বলতে বালিশটা কোলে নিয়ে একটু ঝুঁকে পড়লেন। আমার মা শুয়ে দেয়ার সময় দেখলেন শরীরটা ভারী লাগছে। আমার বাবা ইন্তিকাল করলেন।

গতকাল ছিল শুক্রবার। গতকাল ছিল হজ্জের দিন। আমাদের দেশে ৭ই জিলহজ্জ। সম্মানিত দিন। সম্মানিত মাস। আমার বাবার মৃত্যুর সময় কালিমা তৈয়্যেবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ নসিব হয়েছে। মৃত্যুর ঠিক পূর্বে আমার বাবা কালিমার দাওয়াত দিয়েছেন। আমার মাকে বলেছেন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতে। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে আমার বাবা ধৈর্য্যধারণের উপদেশ দিয়েছেন।

সকল নবী রাসূলরাই দুনিয়ার বুকে মানুষের ময়দানে কালিমার দাওয়াত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ইয়া আইয়্যুহান্নাস, ক্বুলু, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, তুফলিহুন। “হে মানবজাতি, তোমরা বলো, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নেই, তোমরা সফল হবে।” যে বা যারা দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করবে আল্লাহতায়ালা তাদেরকে যেন নবী না হয়েও নবীদের কাজ করার তৌফিক দান করলেন। নবীরা যেমন নিষ্পাপ, আল্লাহতায়ালা ইচ্ছা করলে দাওয়াতের কাজ করার বরকতে তাদেরকেও ক্ষমা করে দিতে পারেন। আমার বাবা তার মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে কালিমার দাওয়াত দিয়ে গেলেন। ধৈর্য্যধারণের উপদেশ দিলেন। সূরা আসরে আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন ঘোষণা দিয়েছেন যারা পরস্পরকে ধৈর্য্যধারণের উপদেশ দেয় তাদেরকে তিনি ধ্বংস করবেন না। আলহামদুলিল্লাহ। আশা করি আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন তার এসব কাজের বিনিময়ে তার জীবনের সমস্ত গুনাহখাতা ক্ষমা করে দিবেন। তার কবরের য়াযাব দূর করে দিবেন। তার কবরকে দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে জান্নাতের সাথে সংযোগ করে দিবেন। হাশরের মাঠে ডান হাতে য়ামলনামা দিবেন। সেদিন তার চেহারা উজ্জ্বল করবেন। পুলসিরাত বিদ্যুতগতিতে পাড় করে দিবেন। জাহান্নাম থেকে বাঁচাবেন। ও জান্নাতে উঁচু মর্যাদা দান করবেন। আমার বাবার বিরুদ্ধে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। আমরা সবাই আমাদের মা বাবার জন্য দুয়া করি। রব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা। হে আমার প্রভু, আপনি আমাদের পিতামাতাকে সেভাবে পালন করুন, যেভাবে তারা আমাদের শিশুবেলায় লালন পালন করেছিলেন।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান