ইয়াজুজ মাজুজের হাত ধরে জেরুজালেমে ফিরে এসে কি ইহুদীরা শেষ রক্ষা করতে পারবে?

কোন জনপদকে আল্লাহ ধ্বংস করেছিলেন যার কথা সূরা আম্বিয়ায় ৯৫-৯৬ নং আয়াতে উল্লেখ আছে? আপনি যদি অসতর্ক আলেম হন, আপনি কখনো সে জনপদকে বের করতে পারবেন না। এমনকি আপনি পবিত্রভূমিও সনাক্ত করতে পারবেন না। আপনি বলবেন তা হবে মিশর, তা হবে সিরিয়া, অথবা লিবিয়া, লেবানন ইত্যাদি। কিন্তু আপনি যদি সত্যিকার অর্থে সে জনপদের সঠিক কাহিনী উদঘাটন করতে চান তাহলে এর জন্য আপনাকে যেতে হবে সূরা বনী ইসরাঈলের শুরুতে। একে একে দশ এগারটি আয়াত তেলাওয়াত করতে হবে। প্রথম আয়াতেই একটি মসজিদের কথা উল্লেখ আছে, যা মসজিদুল আকসা, এবং তৎসংলগ্ন স্থান তথা জেরুজালেম। এটা যে একটি বিশেষ পবিত্র স্থান তথা পবিত্রভূমি সে সম্পর্কে একটি ছোট্ট অসাধারণ সূচনা দেয়ার পরই পরবর্তী কয়েকটি আয়াতে এ শহর ও মসজিদকেন্দ্রিক ইহুদী জাতির অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব কিছুর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এ মসজিদুল আকসা এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে ইসরার রাতে আল্লাহপাক রাসূল ছাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামকে এখানে ভ্রমণ করান এবং এ মসজিদের সমস্ত জ্ঞান রাসূল (সা)-কে দান করেন। কিভাবে এ মসজিদ পূর্বে দু’বার ইহুদীদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এবং কিভাবে শেষ জমানায় আরেকবার তা ইহুদীদের থেকে হাতছাড়া হবে। আপনি আয়াতগুলি পড়লে বুঝতে পারবেন যে, আল্লাহপাক ইচ্ছা করেই (ইহুদীদের অপকর্মের কারণে শাস্তিস্বরূপ) তাদের দু’বার জেরুজালেম থেকে বহিষ্কার করেছেন। প্রথমবার আল্লাহ তাদের ফেরত এনেছেন তাদের তওবার কারণে। কিন্তু দ্বিতীয়বারও তারা ফেরত আসে। কিন্তু এবার তারা ফেরত আসে তওবার কারণে নয়, বরং ইয়াজুজ মাজুজের সহায়তায়। এখানেই আবার ফিরে যেতে হবে সূরা আম্বিয়ার ৯৫-৯৬ নং আয়াতে। “আর যে জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, তার অধিবাসীদের ফিরে না আসা অবধারিত। যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভুমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।” (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৯৫-৯৬) আর বাস্তবেও তাই হয়েছে, তারা অর্থাৎ ইহুদীরা সারা পৃথিবী থেকে দ্রুত অতি অল্প সময়ের মধ্যে জেরুজালেমে চলে আসে এবং জেরুজালেম দখল করে ফেলে। মসজিদুল আকসাও দখল করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু যদি তারা শেষ রাসূল মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লামকে মেনে নিত তাহলে আল্লাহ এবারও তাদের ক্ষমা করে দিতেন। কিন্তু আবারও সীমালঙ্ঘনের কারণে কোরআনে বর্ণিত তারা আবার সেই পূর্বের কঠিন শাস্তির দোরগোড়ায় অপেক্ষা করছে। আল্লাহ বলেন, “হয়ত তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। কিন্তু যদি পুনরায় তদ্রূপ কর, আমিও পুনরায় তাই করব। আমি জাহান্নামকে কাফেরদের জন্যে কয়েদখানা করেছি।” (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ৮) অর্থাৎ তাদের হাত থেকে আবার জেরুজালেম ও মসজিদুল আকসা কেড়ে নেয়া হবে। ঠিক যেভাবে পূর্বে তাদের হাত থেকে দু’বার কেড়ে নেয়া হয়েছিল। অতীতের মতোই তাদের মুখও এবারও কালিমাচ্ছন্ন হয়ে যাবে। যেহেতু মুসলমানদের মধ্যে হযরত ঈসা য়ালাইহিস সালাম উপস্থিত থাকবেন এবং মুসলমানরা মক্কা বিজয়ের ইতিহাস থেকে যে নম্রতার শিক্ষা পেয়েছেন তাতে হয়তো তাদের মুখমণ্ডল কর্তন করা হবে না। মুসলমানরা সেদিন মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করবে যথাযথ সম্মানের সাথে। আল্লাহ বলেন, “এ কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ পথ নির্দেশ করে এবং সৎকর্মপরায়ণ বিশ্বাসীদের সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে অনেক বড় পুরস্কার।” (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ৯) আল্লাহ তায়ালা আমাদের নূর দ্বারা দেখার তৌফিক দান করুন। আমীন।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান