যুগের নারী

প্রথম কথা হইল আপনি একজন কর্মজীবী নারী হইয়া একই সাথে যশোরে আপনার দাদী যাহা করিতেন তাহা করিতে সক্ষম হইবেন না । তাহার ছিল বারটি সন্তান, সোবহানাল্লাহ । কিন্তু আপনার মতো একজন পেশাজীবি নারীর পক্ষে তো বারটি সন্তান লালন-পালন করা সম্ভব নয়, বিরাট ঝামেলার ব্যাপার । কাজেই আল্লাহ কোরআনে বলেন, আল্লাহ আপনাদের জন্য যতটি সন্তান ভালো মনে নির্ধারন করিয়া রাখিয়াছেন তাহার বদলে এখন আপনারা নিজেরাই নিজেদের জন্য যতটি ভালো মনে করিয়াছেন নিয়াছেন । সুতরাং আপনাদের কতটি সন্তান থাকা উত্তম হইবে তাহা আল্লাহ নির্ধারন করিবেন, তাহাই আল্লাহ কোরআনে বলিয়াছেন । “তোমরা স্ত্রীদের নিকট গমন করো এবং কামনা করো আল্লাহ যাহা (সন্তান) তোমাদের জন্য লিখিয়া রাখিয়াছেন । আল কোরআন ।” কিন্তু এখন দাজ্জালের যুগে একটি নতুন বিষয় চালূ হইয়াছে যাহাকে বলা হয় “দ্বায়িত্বশীল পিতামাতা” । কাজেই এখন আপনিই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেছেন । আপনি এবং আপনার স্বামী মিলিয়া সিদ্ধান্ত নিতেছেন কতটি সন্তান নিবেন এবং মাঝখানে কত বছর বিরতি রাখিবেন । আর যখনই আপনি বিরতি দিলেন, কারণ আমি একজন কর্মজীবি নারী, তখনই আপনি শিরক করিলেন । খেয়াল করিবেন “শিরক্” শব্দটি উচ্চারণ করিলাম, কেননা আল্লাহ এভাবেই শব্দটি ব্যবহার করিয়াছেন । আপনি যদি অন্যভাবে ইহা উচ্চারণ করেন তবে আপনি কোরআনকে অপমান করিলেন, মনে রাখিবেন । সংসারের বদলে দাজ্জাল তাহাকে অফিসে পাঠাইয়া দিয়াছে, ফলস্রুতিতে তিনি হইয়া গিয়াছেন খন্ডকালীন স্ত্রী এবং খন্ডকালীন মা । অফিসে তাহার চারপাশে থাকে অসংখ্য পুরুষ আর তিনি একজন সুন্দরী মহিলা । ফলাফল হিসাবে কি ঘটিয়া থাকে আপনারা জানেন, বেশীরভাগ দাম্পত্য সম্পর্ক ভাঙ্গিয়া যাইতেছে । কাজেই নারীমুক্তি আন্দোলনের কারণে সমাজে তালাকের সংখ্যা বাড়িয়া গিয়াছে, বিবাহ বন্ধন ভাঙ্গিয়া যাইতেছে । এই ধরনের ঘটনা কি মালয়েশিয়াতেও ঘটিতেছে ? দাজ্জাল এভাবে মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে তাহাকে ঘরের বদলে বাইরে দ্বায়িত্ব পালনের দিকে নিয়া যাইতেছে । হযরত খাদিজা (রাঃ)ও একজন ব্যবসায়ী নারী ছিলেন, এই জাতীয় ফালতু কথা আমাকে বলিতে আসিবেন না । আমি তাহা জানি, আপনাকে বলিতে হইবে না । আমরা অন্য বিষয়ে আলোচনা করিতেছি । দাজ্জাল কেবল নারী বিপ্লব সাধন করিতে চায় না ; সাথে সাথে যৌন বিপ্লবও সফল করিতে চায় । কাজেই যখন নারীরা এমনভাবে পোষাক পরিধান করে যাহাতে তাহাদেরকে নগ্নই মনে হয়, তাহা পুরুষদেরকে সুড়সুড়ি দিতে থাকে বিশেষতঃ যুবকদেরকে । ফলে সত্যিকারের ভালবাসা কমিয়া যায় এবং তাহার বদলে বৃদ্ধি পায় যাহাকে বলা হয় “লালসা” । আর ইহাও আরেকটি কারণ যাহাতে বিবাহ-বিচ্ছেদ বৃদ্ধি পাইতেছে । কাজেই আখেরী জামানায় এই দাজ্জালের যুগের একটি লক্ষণ হইল আপনি দেখিতে পাইবেন বিবাহ বন্ধন ভাঙ্গিয়া যাইতেছে, বিবাহ-বিচ্ছেদ বৃদ্ধি পাইতেছে ।

মূল – আল্লামা ইমরান নজর হোসেন
অনুবাদ – বশীর মাহমুদ ইলিয়াস

কুরআনে কারীমের নারী – ১ম পর্ব

ইন্নাল হামদা লিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালাম ‘আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ ওয়া ‘আলা ‘আলিহী ওয়া আসহাবিহী ওয়া সাল্লাম তাসলীমান কাসীরা।

আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারীমে তার নবী য়ালাইহিমুস সালামদের দৃষ্টান্ত গোটা মানব-জাতির জন্য পেশ করেছেন। কোন পরিস্থিতি নবীরা কিভাবে সামাল দিতেন। তাদের কুরবানীও বর্ণিত হয়েছে। যে পরিস্থিতিতে আমরা সাধারণ মানুষ প্রায়ই পা হড়কে ফেলি এবং জাহান্নামের উপযুক্ত হয়ে যাই- ঠিক সেরকম পরিস্থিতি নবীরা কিভাবে মোকাবিলা করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আজকে আমরা কেমন চরিত্রের নারীদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করব তা কুরআনে কারীমে বর্ণিত ঘটনা থেকে জেনে নেই।

চলতে ফিরতে আমরা সাধারণত দুই ধরনের নারীদের মুখোমুখি হই এবং দুই ধরনের পরীক্ষায় পরি। এ দুই ধরনের পরীক্ষায় পাশ করার সিস্টেম কুরআন আমাদের শিখিয়েছে।

(১) এক ধরনের নারী আযীযে মিশরের স্ত্রীর যুলায়খার মত। সাথে যোগ হয়েছে নগরের কতিপয় নারী। উনারা সকলে হচ্ছেন আল্ট্রা-মডার্ণ মহিলা। স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত, পাবলিক বাস, বাজার, দোকান, ঘাট, বাসা, বাড়ি, কমিউনিটি সেণ্টার এমনকি ফেসবুক সর্বত্র এদের উপচে পরা উপস্থিতি। তারা সাজুগুজু করে বের হন। মনে মনে কামনা করেন, অন্যরা আমার সৌন্দর্য দেখুক। চোখ দিয়ে গিলুক। মন দিয়ে…….। তাদের এলোমেলো চুল আপনার গায়ে আছড়ে পড়তে পারে; তাদের ব্যবহৃত পারফিউমের সুবাস আপনাকে মাতোয়ারা করে তুলতে পারে। তাদের অঙ্গভঙ্গী, ভাষার কোমল কিংবা চটক কারুকার্য আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। আসুন দেখি যুলায়খা ও নগর-নারীদের কি অবস্থা ছিল এবং তাদের বিপরীতে হযরত ইউসুফ য়ালাইহিস সালামের অবস্থা কেমন ছিল।

“সে (ইউসুফ) যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হল, তখন আমি (আল্লাহ) তাকে হেকমত ও জ্ঞান দান করলাম; আর এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করে থাকি।

সে যে মহিলার ঘরে ছিল সে মহিলাটি তাকে সিডিউস (আকৃষ্ট) করতে চাইল, আর দরজাগুলো বন্ধ করে দিল এবং বলল, ‘তোমাকেই বলছি, এদিকে এসো (আমরা সেক্স করি); সে (ইউসুফ) বলল, (দেখুন কি বলল, অন্তর দিয়ে বুঝার চেষ্টা করুন পাঠক!) ‘আমি আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় চাই, তিনিই আমার রব, আমার উৎকৃষ্ট আশ্রয়দাতা। নিশ্চয়ই জালেমরা কখনো সফল হয় না” [সূরা ইউসূফ, ২২-২৩] অর্থাৎ আমার রবের, আশ্রয়দাতার হুকুম বা বিধিবিধান অমান্য করে আমি জালেম কিভাবে হই? Is it possible? যদি আামি তা করি তাহলে আমি তো ব্যর্থ হয়ে যাব। দেখুন পাঠক! নবীরা সফলতা ও ব্যর্থতাকে কিভাবে বুঝতেন আর আমরা কিভাবে বুঝি। আমাদের কাছেতো আজকে হাই স্যালারী, বড় পোস্ট-পদবী, সুন্দরী ও ধনাঢ্য নারীদের সাথে বৈধ-অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনেই সফলতা। কিন্তু হযরত ইউসুফ য়ালাইহিস সালামের কাছে সফলতা ছিল- তার রবের বিধিবিধান মেনে চলা। আর জুলুম ও ব্যর্থতা ছিল সে বিধিবিধানের লঙ্ঘন। হ্যাঁ! জালেমরা কখনও সফল হয় না। তিনি জানতেন যে তার রবের বিধিবিধান পালনের মধ্যেই আছে সফলতা- যদিও তা পালন করতে গিয়ে তাকে কারান্তরীন হতে হয়।

হে পাঠক! অনেকেই হয়ত বলতে পারে, আজকে সমাজটাই এমন যে নিজেকে রক্ষা করা কঠিন। চারদিকে নারী-পুরুষ ফ্রী-মিক্সিং। স্কুলে, অফিসে, বাজারে সর্বত্র। এমনকি ঘরেও চাচাত, ফুফাত, মামাত ভাইবোন, দেবর, ভাবী ইত্যাদি সম্পর্কের ছুতোয় চলে অবাধ মেলামেশা। তাহলে কিভাবে আমরা নিজেকে রক্ষা করব?

এ উত্তর সেয়ার আগে আসুন আমরা একটু ইউসুফ য়ালাইহিস সালামের অবস্থাটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। তার অবস্থা এমন ছিল না যে তিনি খুব সহজে যুলায়খার আহবান উপেক্ষা করতে পারতেন। তিনি ঐ মহিলার ঘরে থাকতেন। উপরন্তু তার স্বামী ছিল ইউসুফের মনিব। সব কিছু মিলিয়ে তার ওপর যুলায়খার এক রকম কর্তৃত্ব ছিল। তার ওপর ইউসুফ ছিলেন সুপুরুষ, যুবক। তিনি মানবিক দুর্বলতার ঊর্দ্ধে ছিলেন না। এমন অবস্থা হলে আমরা কি করতাম তা আমরা যার যার নিজের কাছেই প্রশ্ন করি না কেন? ইউসুফও হয়তো তাই করতেন যা আমরা করতাম। কিন্তু কোন সে জিনিস তাকে বিরত রাখল?

“সে রমণীতো তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েই পরেছিল এবং ইউসুফও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পরত- যদি না সে তার রবের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করত। তাকে খারাপ কাজ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখার জন্য আমি নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে-তো ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা ইউসূফ, ২৪]

আল্লাহ তায়ালা হযরত ইউসুফ য়ালাইহিস সালামকে এমন কোন নিদর্শন, দলিল বা প্রমাণ দেখিয়েছিলেন যে, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন- যদি তিনি যুলায়খার আহবানে সাড়া দেন সেটি হবে একটি একটি খারাপ ও অশ্লীল কাজ। যেরকম দলিল বা নিদর্শন আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও দান করেছেন। সবচেয়ে বড় নিদর্শন হল কুরআন- যেখানে অশ্লীলতার ধারে কাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। “প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে হোক- তোমরা অশ্লীলতার ধারেকাছেও যেও না” (সূরা আল আন’য়াম, আয়াত ৬ এর অনুবাদ)। এছাড়া নিদর্শন আছে সাহাবাদের জীবনীতে। যেখানে আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ অশ্লীল কাজের কারণে শরীয়তের শাস্তি প্রয়োগ করেছিলেন। যদি আমরা আল্লাহ তায়ালার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হই, তবে কি আমাদের জন্য কুরআন ও হাদীসের নিদর্শন যথেষ্ট নয়?

অতঃপর হযরত ইউসুফ য়ালাইহিস সালাম এমন কি করলেন যা আমাদের জন্য করণীয়, পালনীয়, দৃষ্টান্তস্বরূপ? বিস্তারিত পড়ুন