বিবর্তনবাদ একটি জায়নিস্টদের প্রোজেক্ট।

IPG2

 
বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ঈমানের দাবি। কারণ এটি একটি জায়নিস্টদের প্রোজেক্ট। আই পেট গোট টু ছবিতে Evolution শব্দটি বারবার দেখানো হয়েছে। যেকোনো স্বাভাবিক জ্ঞান সম্পন্ন মানুষই বুঝতে পারে, ইভালুয়েশন একটি জায়নিস্ট প্রোজেক্ট। একে নিয়ে কোন একাডেমিক আলোচনায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ এটি আপনার ঈমান ধংস করতে পারে। যেসব জিনিস বুঝতে কষ্ট হয়, তা অবশ্যই মানুষের স্বাভাবিক ফিতরাতের বিপরীত। যেসব জিনিস বুঝার পর মানুষের মধ্যে জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব আসে, সেসব জিনিষ পরিত্যাজ্য। বিবর্তনবাদ হচ্ছে এমন একটা জিনিস। স্বাভাবিক জ্ঞান বলে, কোন কিছু তৈরি হতে তাকে সৃষ্টি করা লাগে। তার পেছনে ধাপে ধাপে মেহনত করতে হয়। একটা ডিম ভাজতে গেলেও সব উপাদান একটার পর একটা সিকুয়েন্স বজায় রাখতে হয়। আগে চুলায় আগুন দিতে হবে, এর উপর তাওয়া বা কড়াই দিতে হবে। এর পর ডিম ভেঙে ফেটা, পিঁয়াজ, মরিচ অনুপাত মতো কাটা, মেশানো, তেল পরিমাণমতো দেয়া, চুলার উপর তাওয়া দেয়া, এর উপর তেল দেয়া অনেক অনেক কাজ ধারাবাহিকভাবে করতে হয়। কোন একটা কাজ ছুটে গেলে বা আগেপরে করলে হবে না। চুলার উপর ডিম না ভেজে চুলার নীচে ডিম ভাজলেও হবে না।
 
কাজেই মানবদেহ, যেখানে এমন এমন হাজার হাজার বিক্রিয়া প্রতিমুহূর্তে ঘটতে থাকে, হাজার হাজার জটিল প্রোটিন অণু প্রতিমুহূর্তে তৈরি হয়, একটা এনজাইমের একটা নিদিষ্ট জায়গায় কাজ করতে সমস্যা হলে পুরো বিক্রিয়া অচল হয়ে যায়- তা এমনি এমনিই হবে, এটা হতেই পারে না।
 
বরং কোন জিনিসের উপর এরকম ধারাবাহিক মেহনত না করলে তা ধ্বংস হবে। একটা নবজাতক বাচ্চাহকে যদি পরিচর্যা না করেন, সেটাও একটু পর মরে যাবে।
 
আর যেই জিনিস জন্মই হয় নাই, সেটা এমনিই হাজার হাজার বছরে জন্ম হয়ে যাবে, তা অসম্ভব।
 
বিবর্তনবাদ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি অমুসলমানরা করে না। বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে মুসলমানরা। কয়েকদিন পরপর তারা আবির্ভুত হয়। বিশেষ করে যারা একটু লেখাপড়া করেছে, ঈমান আমল তেমন নেই, কাজেই ঈমান আমল হারানোরও ভয় নেই, তারা এসব যখন প্রচার করে, অনেক মানুষ বিভ্রান্ত হয়। আগেই বলেছি, বিবর্তন হচ্ছে এমন একটা জ্ঞান যা একটু জানলে মানুষ নিজেকে পন্ডিত মনে করে। বুদ্ধিজীবী মনে করে। এরকম পন্ডিত মনে করাটাই ইসলামের মেজাজের সাথে যায় না। বিবর্তনওয়ালাদের লেখা পড়লেই মনে হয় তারা একটা জিনিস মানুষকে জোর করে বুঝাতে চাইছেন। কঠিন ভাষা ব্যবহার করছেন। অথচ জ্ঞান সহজ। জ্ঞানের কোন জটিলতা নেই।
 
নবীজি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানব জাতির মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী লোক হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে উম্মী নবী বলতেন। যে জ্ঞান মানুষকে নীরবতা দান করে, মানুষের মনে কোমলতা পয়দা করে সেটাই প্রকৃত জ্ঞান।
 
আল্লাহতায়ালা আমাদের সব অপ্রয়োজনীয় জ্ঞান থেকে হেফাজত করুন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের নূরওয়ালা জ্ঞান দান করুন। এতে যদি আমরা সমাজে অবৈজ্ঞানিক বা অশিক্ষিত বলে চিহ্নিত হই সমস্যা নেই।

বিবর্তনের ব্যর্থতা

হৈ হৈ রৈ রৈ

বিবর্তনবাদীরা গেল কই?

সবাই বিবর্তন হয়া মানুষ হইয়া গেল আর এই উল্লুকটা এখানে শুইয়া ঘুমাইয়া কাটাইয়া দিল। chobi kredit: Ami Rubel

গ্লুকোজ ফুয়েল ফর ব্রেন

গ্লুকোজকে কোষের ভেতর প্রবেশ করানোর কাজটা করে ইনসুলিন। ইনসুলিন থাকুক বা না থাকুক শরীরের পাওয়ার হাউজ অর্থাৎ ব্রেন তো চলতে হবে। আর ব্রেনের ফুয়েল হচ্ছে গ্লুকোজ। তাহলে ইনসুলিন না থাকলে তথা ডায়বেটিস রোগীদের ব্রেন কি গ্লুকোজের অভাবে কাজ বন্ধ করে দেবে? তাহলে তো সারা শরীর বিকল হয়ে যাবে। মুহূর্তের মধ্যে মানুষ মারা যাবে। এজন্যই ব্রেনের কোষগুলোতে গ্লুকোজ প্রবেশ করার জন্য ইনসুলিনের কোন হাত নেই। অবিরত ব্রেন তার জন্য ফুয়েল অর্থাৎ গ্লুকোজ পাচ্ছে। এ কাজটা কি প্রকৃতির খেয়ালে হঠাৎ করে হয়েছে? না কি কোন একজন পরিকল্পনাকারীর মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে হয়েছে? এরকম শরীরের আরো কয়েকটি জায়গা রয়েছে যেখানে গ্লুকোজের প্রবেশ করাটা অবশ্যই প্রয়োজন এবং সে জায়গাগুলোতে ইনসুলিনের কোন ভূমিকা নেই। — এখানে ইনসুলিনকে খাটো করা হচ্ছে না, তাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তার বাইরে সে যেতে পারবে না, বরং এখানে সেই মহাপরিকল্পনাকারীর কুদরত প্রকাশ পাচ্ছে।

বাঘ হরিণের গল্প

tiger-and-deer

বাঘ কেন হরিণ খায় এ জন্য এক নাস্তিক আল্লাহ্‌র উপর ক্ষেপেছেন। তার কথা হলো, “কাজটা ঠিক হইল না। এইটা আল্লাহ্‌র কেমন অবিচার?” – এতক্ষণে হযরতজি তার মেসওয়াকটা দিয়ে দাঁত ঘসতে ঘসতে বললেন, সোবহানআল্লাহ ! আল্লাহ্‌ তো হরিণের প্রতি রহম করেছেন। সবাই হযরতজির দিকে ঘুরে তাকালেন।

তিনি বললেন, বাঘগুলো তো হরিণদের পাহারা দিতেছে। আল্লাহ্‌ তো বাঘকে হরিণের পাহারাদার বানিয়েছেন।

নাস্তিক বলল, কিভাবে?

হযরতজি – শোন, বাঘ যদি হরিণদের পাহারা না দিত তাহলে তোমরা তো সব হরিণ খেয়ে শেষ করে ফেলতে। এতোদিনে হরিণ নামে কোন প্রাণীর অস্তিত্ব বইপত্রেও থাকত না।

সবাই কৌতূহল ভরে হযরতজির কথা শুনতে লাগল।

বাঘে যদি মাসে খায় ২ টা হরিণ, বনে বাঘ না থাকলে মানুষে খেত কমপক্ষে ২০০ হরিণ। তাহলে এতোদিনে হরিণের অস্তিত্ব থাকত?

এখন তোমরাই বল, বাঘকে হরিণের পাহারাদার বানিয়ে আল্লাহ্‌ কি হরিণের প্রতি দয়া করলেন, কি করলেন না?

সবাই বলল, দয়া করলেন।

হযরতজি বললেন, আর এই যে বাঘ দিনরাত ২৪ ঘণ্টা হরিণদের পাহারা দিয়ে চলল, বেচারার তো তোমাদের মতো চাকরী বাকরি নাই, তো তার ফিস বা বেতন কি তোমরা দিবা? এখন সব হরিণরা মিলে যদি এই সিদ্ধান্ত নেয়, বাঘ তো আমাদের অনেক উপকার করেছে, এখন এর বিনিময় দেয়ার মতো তো আমাদের কাছে কিছু নাই। ঠিক আছে যদি সে পরিশ্রম করে, দৌড়ঝাঁপ করে আমাদের কাউকে দিয়ে সে আহার জোটাতে পারে তাতে আমরা মাইন্ড করব না।

হরিণের এই সিদ্ধান্তে তোমাদের কারো আপত্তি আছে?

সবাই বলল, না, আপত্তি নাই।

হযরতজি বললেন, শোনো ভাইয়েরা। এগুলো হচ্ছে আল্লাহ্‌র নিদর্শন। আল্লাহ্‌র নিদর্শন দেখে কেউ মু’মিন হয়, কেউ হয় কাফের। বুঝতে পারছ তো সবাই? জাযাকুমুল্লাহ খাইরান।

নাস্তিকটা এসব কথা শোনে মু’মিন হল কিনা তা আর জানা গেল না। কারণ এতক্ষণে সে পগার পার।

জগতসমূহের বিবর্তনের প্রকৃত ধারণা (এবং সত্যস্বপ্ন)

Baitul Maqdis

আল্লাহর সৃষ্টিজগতের সবকিছু বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্তমান রূপ ধারণ করেছে। আল্লাহর সৃষ্টির অন্য সবকিছুর মত সময়েরও বিবর্তন হয়েছে, এবং তার মধ্যে নতুন নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

১…কুন

সৃষ্টির শুরু হয়েছিল একটি ‘কুন’ বা ‘হয়ে যা’ শব্দ দিয়ে, অতএব বিবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন সৃষ্টি বিভিন্ন পর্যায় ও বিভিন্ন জগতে আবির্ভূত হয়। সৃষ্টিগজতের সবকিছুর সাথে সময়েরও বিবর্তন হয়, এবং তার মধ্যে নতুন নতুন মাত্রা যোগ হয়। এভাবে আল্লাহ স্থান ও সময়ের সাতটি ভিন্ন ভিন্ন জগত সৃষ্টি করেন। অন্য সমস্ত সৃষ্টবস্তু যার যার পরিচিত স্থান ও সময়ে স্থিত হয়।

সৃষ্টজগতের বিবর্তন প্রক্রিয়া শুরু হয় এক কুদরতী আদেশ তথা ‘কুন’ শব্দের মাধ্যমে। বিজ্ঞানে এর হাইপোথেটিকাল নেম বিগ ব্যাং।

“তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের উদ্ভাবক। যখন তিনি কোন কার্য সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নেন তখন সেটিকে এ কথাই বলেন, ‘হয়ে যাও!’ তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়।” (সূরা বাকারা, ১১৭)

২…বিবর্তন দুই জিনিসের – স্থান ও সময়ের

হাদীস থেকে জানা যায় ‘প্রথম সৃষ্ট আলোর’ কথা যাকে সকল সৃষ্টির উৎস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। জাবির রাযিআল্লাহু তায়ালা য়ানহু থেকে বর্ণিত, “আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে জানিয়ে দিন আল্লাহ কোন জিনিসটি অন্য সবকিছুর আগে সৃষ্টি করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, মহান আল্লাহ তায়ালা সবকিছু সৃষ্টি করার আগে নিজের নূর থেকে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।” এটিই সৃষ্টির প্রথম পর্যায়।

সৃষ্টির প্রথম পর্যায়কে বলা যায় সূক্ষ্ম অস্তিত্বের পর্যায়, অর্থাৎ যা বস্তুর মত স্থূল নয়, বরং যা স্থানহীন ও সময়হীন। সৃষ্টির সেই সূক্ষ্ম অস্তিত্বের পর্যায়ে আল্লাহপাক মানুষ ও নবীদের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। (দ্রঃ সূরা আ’রাফ, ৭ঃ১৭২) ও (দ্রঃ সূরা আল ইমরান, ৩ঃ৮১)

অতঃপর স্থান ও সময়ের বিবর্তন প্রক্রিয়ায় কোন এক আলোর জগতে ফেরেশতা সৃষ্টি হয়। এভাবে আগুনের জগতে জ্বীন জাতির সৃষ্টি হয় এবং মাটি, পানি ও আলো-হাওয়ার জগতে মানব, প্রানী ও উদ্ভিদকূলের সৃষ্টি হয়।

বিবর্তনের এই প্রক্রিয়ায় পূর্ববর্তী সৃষ্টির তুলনায় পরবর্তী সৃষ্টি সূক্ষ্মতা, পরিমার্জন, অস্পৃশ্যতা এবং গুণসম্পন্নতার দিক দিয়ে ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। পক্ষান্তরে প্রগতির ধারায় পরবর্তী সৃষ্টির স্থূলতা, অনুভবযোগ্যতা, ভিন্নতা এবং পরিমাপযোগ্যতা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। এটাই হচ্ছে সৃষ্টজগতের মধ্যে এক জিনিস থেকে আর এক জিনিসের উৎপত্তি, বা ‘হয়ে যাওয়া।’ এই প্রক্রিয়া সদা সর্বদাই বিচিত্র থেকে বিচিত্রতর সৃষ্টির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।

কিন্তু তা কখনোই র‍্যান্ডমলি বা স্বাধীনভাবে হয় না। কারণ সৃষ্টিজগত শুধু আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নাম আল-খালিক্বের মুখাপেক্ষী নয়, বরং আল্লাহ তায়ালার আর দু’টি গুণবাচক নাম আর-রব্ব ও আর-রাজ্জাকের মুখাপেক্ষী। আর-রব্বের অর্থ পালক, রক্ষক, পরিবর্ধক ইত্যাদি। আর-রাজ্জাক অর্থ রিযিকদাতা।

কোন জাতি ও বস্তুকে আল্লাহ কি পরিমাণ বিকশিত করবেন এবং তাকে কিভাবে সৃষ্টিজগতে প্রতিপালন করবেন তার মাত্রা নির্দিষ্ট করা আছে।

“আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা (পরিমাপ) ।” (সূরা তালাক্ব, ৬৫ঃ৩)

এর মধ্যে রয়েছে সময়েরও বিবর্তন ও মাত্রা যার বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন সৃষ্টি পূর্ণতা পেয়েছে। কুরআন সাতটি ভিন্ন আকাশের অস্তিস্ত্বের কথা বলেছে যা একে অন্যের পাশাপাশি অবস্থান করে, এবং এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে সময়েরও সাতটি মাত্রা রয়েছে, যার ভেতর দিয়ে দুই দিকেই গমনাগমন করা যায়, এবং এর প্রত্যেকটিই পৃথিবীর জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে।

“তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন খুঁত দেখতে পাবে না। আবার দৃষ্টি ফেরাও, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি?” (সূরা মূলক, ৬৭ঃ৩)

সময় ও স্থানের বিভিন্ন মাত্রার ভেতর দিয়ে মানুষের বিবর্তন ঘটেছে। পরিশেষে সে এই পৃথিবীতে এসে হাজির হয়েছে। ইতিমধ্যে সময় ও স্থানের কোন এক মাত্রায় তাকে আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে আল্লাহর একত্ববাদের অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হয়েছিল। (দ্রঃ সূরা আ’রাফ, ৭ঃ১৭২)। আবার অচিরেই মানুষ মৃত্যূ, কবর, হাশর, পুলসিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদির মাধ্যমে সময় ও স্থানের অন্য মাত্রায় আরোহণ করবে।

“আমি শপথ করি সন্ধ্যাকালীন লাল আভার; এবং রাত্রির, আর তাতে যা কিছুর সমাবেশ ঘটে তার, যখন তা’ পূর্ণরূপ লাভ করে। নিশ্চয়ই তোমরা এক স্তর থেকে আরেক স্তরে আরোহণ করবে।” (সূরা ইনশিক্বাক্ব, ৮৪ঃ১৬-১৯)।

৩…সত্যস্বপ্ন

সত্যস্বপ্ন বা ধর্মীয় ভাববাণী (Prophecy) স্থান ও সময়ের বিভিন্ন মাত্রার বাস্তবতা ব্যাখ্যা করে। সত্যস্বপ্নের দৃশ্যগুলি এমন ঘটনা যা বিবর্তনের মাধ্যমে এখনো বিভিন্ন জগত পার হচ্ছে। সত্যস্বপ্ন অদৃশ্য জগতের বাস্তবতার প্রত্যক্ষ প্রমাণ সরবরাহ করে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহিস সালাম বলেছেন, সত্যস্বপ্ন (এবং সেই সাথে আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি) নবুয়ত শেষ হবার পরেও থাকবে।

“যখন কেয়ামতের সময় নিকটবর্তী হবে, তখন মু’মিনদের স্বপ্ন খুব কমই ব্যর্থ হবে; বিশ্বাসীদের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।”

স্বপ্ন সত্যে পরিণত হবার কারণ এই যে, ঘটে যাবার আগেই সেগুলো অস্তিমান ছিল। আমরা আগেই জেনেছি, কোন ঘটনার সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু হয় আল্লাহর কুদরতি আদেশ ‘কুন’ থেকে। তারপর সেটা সময় ও স্থানের বিভিন স্তর পেরিয়ে বস্তুজগতে প্রকাশ পায় বা সংঘঠিত হয়। পৃথিবীতে ঘটে যাবার আগেই যখন সেটি আধ্যাত্মিক গোচরে আসে, তাকে সত্য স্বপ্ন বলা হয়।

কুরআনে স্বপ্নের কথা আছে, কিন্তু আমাদের সেক্যুলার শিক্ষা স্বপ্নকে অস্বীকার করে। আজকালকার অনেক হুজুর সেকুলার হয়ে গেছে। তারা এখন আর স্বপ্ন টপ্ন বিশ্বাস করে না, এর ব্যাখ্যাও দেয় না।

৪…সাত আকাশ

সময় ও স্থানের বিভিন্ন মাত্রাকে আকাশ বা সামাওয়াত বলা হয়। এটি পরিষ্কার যে, আমরা সেই মিলনস্থল নির্ধারণ করতে পারি না, যেখানে প্রথম আকাশ বা স্তর শেষ হয়েছে আর দ্বিতীয় আকাশ বা স্তর শুরু হয়েছে। কারণ আকাশগুলি এমন নয় যে তা লম্বভাবে একে অপরের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বরং প্রতিটি আকাশ নিজস্ব মাত্রা বজায় রেখে একটি অপরটির সাথে মিশে রয়েছে। এজন্যই মানুষ যখন সিজদায় যায় তার আর আল্লাহর মাঝে আর কোন দূরত্বগত বাঁধা থাকে না। অথবা মানুষ যখন শহীদ হয় মৃত্যুর পূর্বেই তার কাছে জান্নাতের জগত এনে হাজির করা হয়। সে দুনিয়ায় থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পায়।

কিভাবে আলাহ তায়ালা সাতটি আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন এ ব্যাখ্যার মধ্যে নিহিত আছে আল্লাহ যে সর্বত্র বিরাজমান এ বিতর্কের অবসান। আল্লাহপাক তার আরশে সমাসীন কিন্তু সেই আরশ হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে নয়। বরং আমাদের ঘাড়ের শাহ ধমনীর থেকেও নিকটে। কিন্তু তাঁর ও আমাদের মধ্যে আছে সাতটি আকাশের আপাত অলঙ্ঘনীয় দূরত্ব।

ঠিক যেমন আমল নামা লেখার সম্মানিত ফেরশতা কিরামান কাতিবীন আমাদের দু’ঘাড়ে অবস্থান করেও কিন্তু আমাদের আকাশ বা সামা’তে নয় বরং স্থান ও সময়ের অন্য মাত্রায় অবস্থানরত।

অতএব এক আকাশ থেকে আরেক আকাশে প্রবেশ করার জন্য মহাকাশ যানের সাহায্যে হাজার হাজার আলোকবর্ষ ভ্রমণ করার প্রয়োজন নেই। যে কোন মুহূর্তে এক মাত্রা থেকে বেরিয়ে অন্য মাত্রায় প্রবেশ করা যায়। একাজ করার জন্য কোন কর্মচাঞ্চল্যের প্রয়োজন নেই, অর্থাৎ সময় ও স্থানের ভেতর নড়াচড়ারও প্রয়োজন নেই।

এখানেই পাওয়া যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু য়ালাইহিস সালামের ইসরা ও মি’রাজের অলৌকিক ঘটনার ব্যাখ্যা, যখন তিনি মক্কা হতে জেরুজালেম পর্যন্ত এবং তারপরে সপ্তাকাশের ভিন্ন ভিন্ন সময় ও স্থানের মাত্রার ভেতর দিয়ে আরোহণ করে আবার মক্কায় ফিরে আসেন। এরই মধ্যে নিহিত রয়েছে ঈসা য়ালাইহিস সালামের আসমানে আরোহণ, এবং দাজ্জালের এক দিন সমান এক বৎসর, এক দিন সমান এক মাস ও এক দিন সমান এক সপ্তাহ ভিন্ন স্থান ও সময়ের মাত্রায় কাটিয়ে আমাদের পরিচিত স্থান ও সময়ের মাত্রায় এক দিন সমান এক দিনে ফিরে আসা।

হতে পারে দাজ্জালের এক বৎসর পৃথিবীর প্রায় সাতশ বছরের সমান যা প্যাক্স ব্রিটেনিকা নামে পরিচিত। আবার তার এক মাস পৃথিবীর প্রায় ৭০-৮০ বৎসরের সমান যা প্যাক্স আমেরিকানা নামে পরিচিত। আমরা অপেক্ষায় আছি দশ বিশ বছরের প্যাক্স জুদাইকার যা হবে পৃথিবীর ভয়ঙ্কর যুদ্ধের ফিতনার দিন।

ইসলাম স্থান ও সময়ের বিবর্তনকে ঠিক ঠিক ব্যাখ্যা করে যার মধ্যে নিহিত আছে হেকমত বা প্রকৃত বিজ্ঞান। এটা বুঝার জন্য প্রয়োজন ঈমান। ডারউইনবাদ বা নাসার মহাকাশ বিজ্ঞান অথবা ইউরোপ আমেরিকার সেক্যুলার সায়েন্টিফিক জ্ঞান দ্বারা তার কিছুই বুঝা যাবে না।

আল্লাহু য়ালাম।

(শায়খ ইমরান নযর হোসেনের ‘সূরা কাহাফ এবং বর্তমান বিশ্ব’ এবং ‘পবিত্র কুরআনে জেরুজালেম’ গ্রন্থ অবলম্বনে)

বিশ্বাসের দর্শন‬ ও অবিশ্বাসের ভাইরাস (১৩)

লিখেছেনঃ Muhammad Masih Ullah

কতই না অদ্ভূত আমাদের এই চোখ! যখনই চোখের গঠন নিয়ে ভাবি, দৃষ্টির রসায়ন নিয়ে চিন্তা করি, আমার ভেতরটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নুইয়ে আসে।ইচ্ছে করে এক সিজদায় জীবনটা কাটিয়ে দিই।

কী আশ্চর্য গঠনই না আমাদের এই চোখের। চল্লিশের অধিক বৈচিত্র্যপূর্ণ অংশ নিয়েই এই আঁখিযুগল। এর মধ্যে মাত্র একটির অবস্থাই যদি আমরা বিবেচনা করি, বুঝে আসবে কোন জিনিসের নাম সৃষ্টিকৌশল।

আমাদের চোখের বৈচিত্র্যময় একটি অংশ লেন্স। যে বিষয়টি আমরা কখনোই উপলদ্ধি করি না, এই যে চোখের সামনের প্রতিটি বস্তুকে আমার সুস্পষ্ট দেখা, তা যে এই লেন্সটির অবিরাম স্বয়ংক্রিয় ফোকাসিং এরই ফসল।

চোখের সামনে আমার আঙ্গুলের অগ্রভাগ ধরলাম। এক দৃষ্টিতে তাকালাম আঙ্গুলটির অগ্রভাগে। অতঃপর সেখান থেকে দ্রুত দৃষ্টিকে সরালাম সামনের দেয়ালে। আবার দ্রুত নজর করলাম আঙ্গুলে। দৃষ্টির প্রতিটি পরিবর্তনে আমরা অনুভব করি সূক্ষ্ম এক দ্রুত এডজাস্টমেন্ট।

লেন্সটি মাইক্রোসেকেন্ডেরও কম সময়ে তার পুরুত্বকে পরিবর্তন করছে। আর লেন্সের পুরুত্বের এই পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কতগুলো পেশি। এরা দ্রুত সংকোচিত ও প্রসারিত হয়ে লেন্সটিকে এডজাস্ট করে নিচ্ছে যেন সামনের বস্তুটি আমার কাছে স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। লেন্সটি এভাবে নিজের পুরুত্বকে এডজাস্ট করছে আমাদের জীবনের প্রতিটি সেকেন্ডে। আর কোন প্রকার ভুল করছে না একবারও।

ফটোগ্রাফার যখন ছবি তোলে, প্রতিবার হাতের মাধ্যমে নিজেদের ক্যামেরার এই এডজাস্ট তারা করে নেয়।কখনো কখনো তাদের সঠিক ফোকাসের জন্য কিছু সময় রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি এমন ক্যামেরা উদ্ভাবন করেছে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফোকাসিং করতে পারে। কিন্তু কোন ক্যামেরাই চোখের মতো এত দ্রুত ও এত সঠিকভাবে ফোকাস করতে পারে না।

একটা চোখ কেবল তখনই দেখতে সক্ষম, যখন চল্লিশেরও বেশি অংশ একই সময়ে একসাথে সঠিকভাবে কাজ করে। চোখের লেন্স সেই অংশগুলোর মাত্র একটি।

যখন চোখের প্রতিটি অংশ- কর্নিয়া, আইরিশ, পিউপিল, রেটিনা, অক্ষি-পেশিগুলো সবাই একসাথে সঠিকভাবে কাজ করছে, কিন্তু কেবল আইলিড (নেত্রপল্লব) অনুপস্থিত, তবে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে চোখের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে আর সে কাজ করা বন্ধ করে দেবে। সবই ঠিক আছে, কেবল অশ্রু তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে গেলো, চোখ শুকিয়ে যাবে এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যে অন্ধ হয়ে যাবে। বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বাসের দর্শন ও অবিশ্বাসের ভাইরাস (৯)

লিখেছেনঃ Muhammad Masuh Ullah

অফিস থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে সোজা দস্তরখানে পৌঁছে গেলো আশিক।ছোট ছোট ভুনা মাছ আশিকের বড় পছন্দ।সোজা ঐ প্লেটটির দিকেই নজর পড়লো তার। আর নজর ওখানেই আটকে গেলো। হাসির একটা চিকন রেখা ছড়িয়ে পড়লো তার ঠোঁটে।
মাছগুলো প্লেটের উপর এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেন ইংরেজি বর্ণমালার কিছু অক্ষর ফুটে উঠে। সাদা প্লেটে ভুনা লালচে-কালো ছোট মাছগুলো দিয়ে লিখা ‘I LOVE YOU’.
মাছগুলো তো আর এমনি এমনি এভাবে সজ্জ্বিত হয় নি। এ যে সালমারই কাজ!
আশিকদের বিয়ে হয়েছে এক মাস হয় নি। এরই মধ্যে মেয়েটি তাকে কত আপন করে নিয়েছে। আর কত ভাবে নিজের আবেগটুকু জানিয়ে দিচ্ছে বার বার।
‘নাহ! আজই ওকে নিয়ে বেড়াতে যেতে হবে।ছোট খালার বাসায়।
আশিকরা সিএনজি থেকে নামলো।চোখের সামনে সদ্য রঙ করা চারতলা দালান। দালানের সামনে ছোটখাট একটা ফুলের বাগান। বাগানের মাঝামাঝি ঘন, সন্নিবেশিত ফুলের গাছগুলো এমনভাবে কেটে সাইজ করা, তাতে ফুটে উঠেছে বাংলা বর্ণমালার কিছু অক্ষর। সহজেই চোখে পড়ে, তাতে লিখা ‘অবকাশ ‘। অবকাশ খালাদের দালানটিরই নাম।
আশিক ভাবে, আজ দুপুরে মাছের প্লেটের এই সজ্জ্বা, এখানে খালাদের বাগানের চারাগুলোর এই সাজ যেমন বলে দেয়- এর পিছনে রয়েছে কারো নিপুণ হাতের সাক্ষর, ঠিক তেমনই এই আকাশ, এই নদী, এই তরুতলা, এই বৃক্ষ, সর্বোপরি মানুষের ডিএনএ এর এই সচেতন বিন্যাস নিশ্চয়ই কোন একজনের নিপুণ হাতের কারিশমা। আর তিনিই আমাদের স্রষ্টা, আমাদের মহান রব।”

প্রথম প্রথম যখন চীনা ভাষার পত্রিকার কোন পাতা বাজার থেকে জিনিসপত্রের সাথে প্যাকেট আকারে আসতো, দেখে অবাক হতাম। এভাবে, এমন করে প্যাঁচিয়ে লিখে কিভাবে? আর কি বিষয়েই বা লিখা হয়েছে এই পাতায়? বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বাসের দর্শন ও অবিশ্বাসের ভাইরাস (৬)

লিখেছেনঃ Muhammad Masih Ullah

কিছুক্ষণের জন্য আমরা ‘অসম্ভব’ শব্দটিকে ভুলে যাই।
ধরা যাক, খুবই অনুপযোগী ও বিশৃঙ্খল এক পরিবেশে একদম কাকতালীয়ভাবে গঠিত হলো একটা প্রোটিন অনু। পৃথিবীর সেই শৈশবে যখন পরিবেশ আসলেই ছিলো অস্থির, বিশৃঙ্খল।

এই প্রোটিন অনুটি সেই অস্থির পরিবেশে অপেক্ষা করতে লাগলো অনাগত প্রোটিন অনুর জন্যে। অবশেষে আবার ‘বাই চান্স’ কাকতালীয় ভাবে তৈরি হলো দ্বিতীয় প্রোটিন অনু। আর একদম প্রথমটির পাশে বসে গেলো। সেই প্রতিকূল পরিবেশে সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে প্রোটিন অনুগুলো অপেক্ষা করতে লাগলো বছরের পর বছর আল্ট্রা ভায়োলেট রে ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাবকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে। তারপর মিলিয়ন মিলিয়ন প্রোটিন অনু এভাবে এক এক করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গঠিত হতে লাগলো এবং সুশৃঙ্খলভাবে একের পাশে এক বসে যেতে লাগলো অটোমেটিক। আর এভাবেই তারা তৈরি করতে লাগলো একটা অর্থবহ কম্বিনেশন আর তৈরি হতে লাগলো জীবকোষের অঙ্গানুগুলো। বাইরের কোন বস্তু, ক্ষতিকর কোন অনু, অপ্রয়োজনীয় কোন প্রোটিন চেইন তাদের কাজে কোন ব্যাঘাত ঘটাতে পারলো না।

তারা এভাবে সৌহার্দপূর্ণ পারস্পরিক এক সংযোগ তৈরি করলো এবং প্রয়োজনীয় এনজাইমগুলোকেও নিজেদের কাছাকাছি সন্নিবেশিত করলো। তারপর তারা নিজেরা নিজেরাই একটা মেমব্রেন (পর্দা) দিয়ে ঘিরে নিলো আর আর ভেতরটাকে পরিপূর্ণ করে নিলো এমন এক বিশেষ তরল দিয়ে যা তাদের জন্য একটা আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।

ধরে নিলাম, এ সব খুব বেশি অসম্ভব ইভেন্টগুলো আসলেই ‘বাই চান্স’ সম্ভব হয়ে গেলো, তারপরও কি এই অনুপুঞ্জ সম্মিলিতভাবে প্রানের আবির্ভাব ঘটাতে পারে?
উত্তর হচ্ছে ‘না’।

কারন হাজার হাজার গবেষণা দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে, জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক সব উপাদান এক জায়গায় জমা হয়ে গেলেও জীবনের সূচনা করা যায় না। জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রোটিনগুলো সংগ্রহ করা গেলো, সেগুলোকে একটা টেস্টটিউবে নিয়ে হাজার চেষ্টা করেও কি একটা জীবন্ত কোষ তৈরি করা সম্ভব? বিস্তারিত পড়ুন