ইয়াজুজ মাজুজের কথা কোরআনে আছে। কাজেই আসুন আমরা একটু অনুসন্ধান করি সেখানে কি আছে।
কোরআনে সূরা আম্বিয়ার ৯৫-৯৬ নং আয়াতটি একটু মন দিয়ে বুঝি। আমরা জানি ইহুদীরা বরকতময় পবিত্রভূমি বা জেরুজালেম থেকে আল্লাহর হুকুমে বহিষ্কার হয়েছিল, যখন তারা পুনরায় সেই পবিত্রভূমিতে ফিরে যাবে তখনই বোঝা যাবে ইয়াজুজ মাজুজের কারণেই তারা পবিত্রভূমিতে ফেরত এসেছে। এটাই ইয়াজুজ মাজুজ বের হওয়ার সাইন।
আমরা জানি আল্লাহর হুকুমে ইহুদীরা দুইবার বহিষ্কৃত হয়েছিল। শেষেরবার বহিষ্কৃত হওয়ার দুই হাজার বছর পর তারা বৃটেনের বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ইসরায়েলে ফিরে যায়। এরপর থেকে তারা সারা দুনিয়ার প্রতিটি ভূমি থেকে দলে দলে ইসরায়েলে আবাসন গাড়ে। এ কথাকেই সূরা আম্বিয়ায় স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। “যেসব জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, তার অধিবাসীদের ফিরে না আসা অবধারিত। যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভুমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।” (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৯৫-৯৬)।
এখন দেখুন কারা সারা দুনিয়ায় ইতিপূর্বে ছড়িয়ে পড়েছিল? কাদের আল্লাহ তায়ালা তাদের নিজভূমি থেকে বের করে দিয়েছিলেন আল্লাহর অবাধ্যতার শাস্তিস্বরূপ। এর উত্তর আছে সূরা বনী ইসরায়েলে। “আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাবে পরিষ্কার বলে দিয়েছি যে, তোমরা পৃথিবীর বুকে দুবার অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং অত্যন্ত বড় ধরনের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে। অতঃপর যখন প্রতিশ্রুত সেই প্রথম সময়টি এল, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর যোদ্ধা বান্দাদেরকে। অতঃপর তারা প্রতিটি জনপদের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল। এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল।” (সূরা বনী ইসরায়েল, আয়াত ৪-৫)
প্রথমবার বের করে দেয়ার পর, আল্লাহ তাদেরকে আবার সুযোগ দেন যেন তারা ভালো কাজ করতে পারে। কিন্তু তারা আবারও আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়। ফলে আল্লাহ তাদের আবার জেরুজালেম থেকে বের করে দেন।
“অতঃপর আমি তোমাদের জন্যে তাদের বিরুদ্ধে পালা ঘুরিয়ে দিলাম, তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও পুত্রসন্তান দ্বারা সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটা বিরাট বাহিনীতে পরিণত করলাম।
তোমরা যদি ভাল কর, তবে নিজেদেরই ভাল করবে এবং যদি মন্দ কর তবে তাও নিজেদের জন্যেই। এরপর যখন দ্বিতীয় সে সময়টি এল, তখন অন্য বান্দাদেরকে প্রেরণ করলাম, যাতে তোমাদের মুখমন্ডল বিকৃত করে দেয়, আর মসজিদে ঢুকে পড়ে যেমন প্রথমবার ঢুকেছিল এবং যেখানেই জয়ী হয়, সেখানেই পুরোপুরি ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।” [ সুরা বনী-ইসরাঈল, আয়াত ৬-৭ ]
তাদের সেই ভূমি যে বরকতময় পবিত্রভূমি তথা জেরুজালেম ছিল তাও সূরা বনী ইসরাইয়েলের প্রথম আয়াত পাঠ করলে বোঝা যায়। “পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই।” (সূরা বনী ইসরায়েল, আয়াত ১)
দ্বিতীয়বার বের করে দেয়ার পর, তারা তখনই তৃতীয়বারের মতো ফেরত আসতে পারবে যখন ইয়াজুজ মাজুজ বন্ধনমুক্ত হয়ে যাবে। বস্তুতঃ ইয়াজুজ মাজুজের সহায়তায়ই তারা ২০০০ বৎসর পর জেরুজালেমে ফিরে আসে। এবং পুনরায় তারা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়। যেমন, ফিলিস্তিনের নাগরিকদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করে, মসজিদে আকসা দখল করে সেখানে থার্ড টেম্পল তৈরি করতে চায় এবং প্রতিটি মুসলিম দেশে অশান্তি সৃষ্টি করে।
কেন ইউরোপীয় ধর্ম-নিরপেক্ষ অ-ইহুদীরা চরম সাম্প্রদায়িক ইহুদিদের জেরুজালেমে ফেরত আনল? পৃথিবীর ইতিহাসে ধর্ম-নিরপেক্ষ বলতে কিছু ছিল না। অথচ পৃথিবী প্রত্যক্ষ করল এক ধর্ম-নিরপেক্ষ ইউরোপীয় জাতিকে যারা বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ইহুদীদের পক্ষাবলম্বন করল এবং তাদেরকে জেরুজালেমে ফেরার ব্যবস্থা করে দিল। যা সূরা আম্বিয়ার ৯৫-৯৬ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। “যেসব জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, তার অধিবাসীদের ফিরে না আসা অবধারিত। যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভুমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।” (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৯৫-৯৬)।
গোগলে সার্চ দিয়ে দেখবেন সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নিম্নভূমি হলো জেরুজালেম। এজন্যই কুরানে বলা হয়েছে, তারা প্রতিটি উচ্চভূমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।
আশা করি বাকীটুকু একটু নিজেরা চিন্তাভাবনা করবেন। একটু বোঝার চেষ্টা করবেন যে, কিভাবে ইহুদীরা আবার জেরুজালেমে ফিরে এলো সারা বিশ্বের প্রতিটি আনাচে কানাচে হতে এবং কারা তাদের সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল। তখনই বুঝতে পারবেন, যারা সেই বেলফোর ঘোষণা দিয়েছিল তারাই হলো ইয়াজুজ মাজুজ। আর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামও বলে গিয়েছিলেন যে, ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীরে ছিদ্র হয়ে গেছে। কাজেই তাদের সেই প্রাচীর থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া রাসূল ছাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সালামের সময়ই শুরু হয়েছিল। এবং তারাই এখন সারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করছে। সাথে সাথে আমরা দেখতে পাচ্ছি তাবারিয়া হ্রদ বা সী অব গ্যালিলী শুকিয়ে যাচ্ছে।
বিস্তারিত জানার জন্য শায়খ ইমরান নজর হোসেনের পবিত্র কুরআনে জেরুজালেম বইটি পড়ুন।