র‍্যাবাইদের সেই তিনটি প্রশ্ন

মক্কার কুরাইশদের কাছে দীর্ঘদিন নবী না আসায় তারা নবীদের সম্পর্কে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লাম নবী দাবি করার পর তারা এ দাবির সত্যতাকে যাচাই করার জন্য মদীনার ইহুদীদের শরণাপন্ন হল। কারণ তাদের কাছে নিয়মিত নবী আসছিল এবং তারা একজন নবীর প্রতীক্ষায় ছিল।

তারা ইয়াসরিবে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাল।

ইহুদী র‍্যাবাইরা প্রতিনিধি দলের নিকট তিনটি প্রশ্ন বলে দিল যা একজন নবীর পক্ষেই উত্তর দেয়া সম্ভব।

প্রথম প্রশ্নটি ছিল, তাকে জিজ্ঞেস কর সেই যুবকদের কি হল যারা প্রাচীনকালে গায়েব হয়ে গিয়েছিল, এবং তাদের সম্পর্কে একটি সুন্দর কাহিনী রয়েছে।

দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল, তাকে সেই পরাক্রমশালী পর্যটকের কথা জিজ্ঞেস করো যে, পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তের কাছাকাছি পৌছেছিল।

তৃতীয়তঃ তাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো।

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লাম কি উত্তর দেন ইহুদী র‍্যাবাইরা সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই আগ্রহী ছিল। কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য তারা মনে করত ইহুদীদের বাইরে আর কোন নবী আসবে না। আর তারা তৌরাতকে পরিবর্তন করে ইসমাঈল য়ালাইহিস সালামকে হেয় করত বা বন্য গর্দভ আখ্যা দিত।

আল্লাহ পাক কুরআনে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। রূহ সম্পর্কিত উত্তরটি দিয়েছেন সূরা বনী ইসরাঈলে। বাকী দুটি উত্তর সূরা কাহাফে।

রূহ বিষয়ক প্রশ্নটি ছিল হেঁয়ালি ও চালাকিপূর্ণ। মানুষের আত্মাকে রূহ বলা হয়, হযরত জিবরাঈল য়ালাইহিস সালামকে রূহ বলা হয় আবার আল্লাহ যখন বলেন বলেন, তিনি মানুষের মধ্যে তাঁর রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছেন, তখন বুঝা যায় আল্লাহই প্রকৃত রূহের অধিকারী।

উপরের সবকটি সম্ভাবনাকে আল্লাহ সংক্ষিপ্তভাবে এক উত্তরের মধ্যে নিয়ে আসেন।

“আর তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, আপনি বলুন, রূহ আমার প্রভুর আদেশ। আর এ বিষয়ে তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে।” (সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭ঃ৮৫)

বলা যায়, আল্লাহ এক কথায় তাদের প্রশ্নটিই খারিজ করে দিলেন, যে এ বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান সামান্য, এটা তোমাদের বোঝার বিষয় না।

দ্বিতীয় প্রশ্নের আড়ালে তাদের গোপন প্রশ্ন ছিল। সেটা ছিল ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কিত, যার ব্যাপারে শুধুমাত্র নবীরাই জানতে পারেন। দ্বিতীয় উত্তরটি যুলকারনাইন এবং ইয়াজুজ মাজুজের সঠিক ঘটনাটি ব্যাখ্যা করেছে।

প্রথম প্রশ্নটি ছিল গুহার যুবকদের সম্পর্কে। এর আড়ালের প্রশ্নটি ছিল দাজ্জাল সম্পর্কে। কিন্তু আল্লাহ কুরআনের কোথাও দাজ্জালের নাম উল্লেখ না করেই যুবকদের বিস্তারিত তথ্য দেন। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু য়ালাইহিস সালাম প্রকাশ করে দিলেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত তিলাওত করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। এই প্রথম দশ আয়াতেই গুহার যুবকদের কাহিনীর সূচনা হয়েছে। তাই দাজ্জাল বিষয়ে র‍্যাবাইগণ অনুমানের জালে আবদ্ধ রইল।

এই তিনটি প্রশ্নের যে উত্তর নবীজী সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লাম দিয়েছেন, আজ চৌদ্দশ বছর হয়ে গেল ইহুদীরা উত্তর তিনটি সম্পর্কে তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

শায়খ ইমরান নযর হোসেন তার সূরা কাহাফ এবং বর্তমান বিশ্ব গ্রন্থে সারা বিশ্বের ইহুদীদের আহবান জানিয়েছেন তারা যেন উত্তর তিনটি নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান